Brands
Discover
Events
Newsletter
More

Follow Us

twitterfacebookinstagramyoutube
ADVERTISEMENT
Advertise with us

সেলেবদের ছবি এঁকে ছেলেটা আজ সেলিব্রিটি

সেলেবদের ছবি এঁকে ছেলেটা আজ সেলিব্রিটি

Friday August 25, 2017 , 4 min Read

কিছুদিন আগে শাহরুখ খানের ছবি এঁকে ভিড়ের মধ্যেও নজর কেড়ে নিয়েছিলেন নমন। ‘যব হ্যারি মেট সেজল’—এর প্রমোশনে এসেছিলেন কিং খান। শহরের একটি ফাইভস্টার হোটেলের বাইরে নিজের হাতে আঁকা বাদশাহ ছবি নিয়ে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন । নায়ককে দেখতে ফ্যানেদের হুড়োহুড়ির ভিড়েও শাহরুখের নজর পড়েছিল সেই দিকেই। নমনকে ডেকে নিয়ে ছবির ব্যাপারে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। ব্যাস ছবিতে বলিউড বাদশার অটোগ্রাফ তখন আর আটকায় কে। তার আগে ঋত্বিক রোশন, বরুণ ধাওয়ান, আলিয়া ভাটরাও তরুণ শিল্পীর ক্যানভাসে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছেন।
image


পেন্সিলে আঁকিবুকি ছেলেটার সহজাত সেই ছোট্টটি থেকে। বছর দশেক যখন বয়েস,তখন প্রায় পাকা হাত। পেন্সিলে আঁকা মহাত্মা গান্ধীর ছবি এঁকে প্রশংসা নয় বকুনি জুটেছিল ডন বস্কো লিলুয়ার ক্লাস ফোরের ছেলেটির। কারণ আঁকার টিচার বিশ্বাসই করতে পারেননি ছবিটি ওইটুকু বাচ্চার হাতে আঁকা। নমন নেওটিয়া, সেলেব্রিটিদের অবয়ব হুবহু ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলে সেই দিনের সেই শিশু এখন নিজেও প্রায় সেলেব্রিটি!

‘ছোট বেলায় কার্টুন আর কমিকবুকের হিরোদের এঁকে মজা পেতাম। বড় হলাম যখন সেলেব্রিটিদের ছবি আঁকতে শুরু করলাম’, আড্ডার মুডে সেন্ট জেভিয়ার্সের বিকম ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র বছর কুড়ির নমন নেওটিয়া। গোলাবাড়ি পুলিস স্টেশন কাছে বাড়ি। বাবা লোহার ছাঁট ব্যবসায়ী। যৌথ পরিবারে বড় হওয়া নমনকে আঁকায় বরাবরই উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন সবাই। স্কুলের পাট চুকিয়ে কলেজে পা রাখতেই ছবি আঁকার জন্য বন্ধুদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শুধু বন্ধু কেন আত্মীয়রাও কম কী যায়। নমন আঁকতে ভালোবাসে, আর নমনের পেন্সিলের কারিকুরিতে নিজের মুখ দেখা বেশ আনন্দ দিত সবাইকে। ‘কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে এক বন্ধুর ছবি এঁকে ৫০০টাকা পেয়েছিলাম। ওটাই আমার প্রথম উপার্জন’, আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন লিলুয়ার তরুণ শিল্পী। সেখান থেকে নমনের জনপ্রিয়তার গ্রাফ ক্রমশ উর্ধ্বমুখী। নিজস্ব ফেসবুক পেজ রয়েছে। দেশজুড়ে ক্লায়েন্ট। দেশের বাইরেরও অনেকে এখন সেন্ট জেভিয়ার্সের এই ছাত্রটির ভক্ত। ২০০০ টাকা থেকে শুরু। ছবির মাপ, বিষয় এবং মাধ্যমের ওপর ভিত্তি করে রেট ঠিক হয়।

সম্প্রতি NBA সুপারস্টার বাস্কেটবল খেলোয়াড় কেভিন ডুরান্ট ৩ দিনের ভারতে এসেছিলেন প্রমোশনের কাজে। NBA অ্যাকাডেমিতে দেশের সেরা বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের ক্লাস নিয়েছেন। এই NBA সুপারস্টারের ছবি এঁকে নমন তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে। ক্যানভাসে নিজেকে দেখে ডুরান্ট নিজেও তাজ্জব বনে গিয়েছেন। চোখের চাউনি থেকে মুখের ভাঁজ,চোখের অভিব্যক্তি কোথাও খুঁত নেই। মুগ্ধ ডুরান্ট ছবিটি নিজের কাছে রেখে দেন। ‘মিনিট খানেক ডুরান্টের সঙ্গে ছিলাম। এখনও পর্যন্ত আমর জীবনের সেরা মুহূর্ত ওই কিছুক্ষণ’, তখনও ডুরান্টে মজে নমন।

বাস্কেটবল প্রীতি নমনের স্কুলের শুরু থেকে। ওরই কয়েকজন বন্ধু বাস্কেটবল শিখত। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় বেঁটেখাটো ছেলেটিও। ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি হাইট নিয়ে ক্লাস ইলেভেনে পড়ার সময় স্কুলের দলে চান্স পেয়ে যায়। পয়েন্ট গার্ড হিসেবে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছিল নমন। ‘কলেজের বাস্কেটবল টিমের নিয়মিত সদস্য আমি। দলের সবচেয়ে বেটে খেলোয়াড়কেই পয়েন্টগার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর এই দায়িত্ব পাওয়া মানেই তাকে ভালো বল হ্যান্ডলার, পাসার আর ড্রিবলার হতে হবে। তার জন্য নিয়মিত প্র্যাকটিস মাস্ট’, গল্পে মজে নমন। তারপর বাস্কেটবল ক্যারিয়ারের কী হল? ‘ট্রেনিংয়ে অনেকটা সময় চলে যাচ্ছিল। আর আমার মনে পড়ে ক্যানভাসে্। ছবি আঁকায় বেশি সময় দিতে চেয়েছিলাম। বুঝতে পারলাম দুটো একসঙ্গে চলতে পারে না। ব্যাস, বাস্কেটবল ক্যারিয়ারে ইতি’, হাসেন তরুণ শিল্পী।

খেলা ছাড়লেও ভালোবাসা কমেনি এতটুকু। জুনে সোশ্যাল মিডিয়ায় নমন জানতে পারেন ডুরান্ট আসছেন দেশে। তখন থেকে স্বপ্ন দেখা শুরু। ৬ ফুট ৯ ইঞ্চির এই খেলোয়াড় তাঁর স্বপ্নের হিরো। একবার দেখা করতেই হবে। কলেজের এক সিনিয়রের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ‘NBA—এর এক ভারতীয় আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে জানাই আমি একজন পেশাদার শিল্পী। কয়েকটি স্যাম্পলও দেখাই। তার তিন সপ্তাহ পর একটি মেল পাই, যেখানে বলা হয়েছে ডুরান্ট ২৮ জুলাই আমাকে সময় দিয়েছেন’,শিল্পীর চোখে আনন্দের ঝিলিক। পাক্কা ১২ দিন সময় লেগেছিল ছবিটা শেষ করতে। ‘আমার সেরা কাজ। এতটা নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম স্কুলের পরীক্ষার দিনগুলির কথা মনে পড়ছিল’,সেই সময়ের অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে উত্তেজনায় ঠাণ্ডা ঘরে বসেও বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে নমনের কপালে। ২৮ জুলাই নমনের মন থেকে কোনওদিন মোছার নয়। ‘ডুরান্টের সঙ্গে ওই কয়েক মিনিটের সাক্ষাতে আত্মবিশ্বাস কয়েক ধাপ বাড়িয়ে দেয়। ঠিক করে নিই পেন্সিল,তুলি, রঙ, ক্যানভাসই আমার ভবিষ্যৎ। ওটাই আমার ক্যারিয়ার’, আত্মবিশ্বাসী শোনায় তরুণের গলা।

নমনের শিল্পের যাদুতে মুগ্ধ হয়েছেন প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিও। জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের সঙ্গে একটি ওয়ান ডে ম্যাচ খেলতে ধোনি এসেছিলেন কলকাতায়। গোটা টিম উঠেছিল তাজ বেঙ্গলে। ধোনির সঙ্গে দেখা করার সৌভাগ্য হয়নি নমনের, তবে তাঁর হাতে আঁকা ছবি পৌঁছে গিয়েছিল ভারতীয় উইকেট কিপারের কাছে। ‘অটোগ্রাফ দিয়ে ছবি ফেরত পাঠানোর সময় প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়ে কয়েকটা লাইন লিখেছিলেন। খুব বেশি কিছু না হোক, এই ছোটছোট পাওয়াগুলিই আমার কাছে উল্কা গতিতে ছুটে চলার পাথেয়’,বলে চলেন নমন।